চার্জ শেষে ফোন চার্জার কি সকেটে লাগিয়ে রাখা উচিৎ?

আমরা অনেকেই আছি যারা মোবাইল বা অন্য কোন ডিভাইসের চার্জার দেয়ালের বৈদ্যুতিক সকেটে লাগিয়ে রাখি, কিন্তু সেখানে কোনো ডিভাইস কানেক্টেড রাখি। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, চার্জারটি লাগিয়ে রাখা কি ঠিক হবে? এক্ষেত্রে কতটুকু বিদ্যুৎ খরচ হতে পারে?

আজকের লেখায় আমরা আলোচনা করব, চার্জ দেয়ার পরও দেয়ালের সকেটে চার্জার লাগিয়ে রাখাটা যৌক্তিক কি না। এটি কি তাহলে আমাদের মাসিক বিদ্যুৎ বিল বাড়িয়ে দেয় বা কতটুকু বাড়ায়?

চার্জারের এরকম স্ট্যান্ড-বাই মোডে রাখলে কতটুকু বিদ্যুত খরচ হয় তা নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। অনেকের মতে স্ট্যান্ড-বাই মোডে চার্জার সকেটে প্লাগড-ইন অবস্হায় থাকলে অনেক সময় তা রাক্ষস এর মত পাওয়ার কনজিউম করে। এটাকে বলা হয় “ভ্যামপায়ার পাওয়ার”। তবে আদৌ স্ট্যান্ডবাই মোডে চার্জার  রাক্ষস এর মত পাওয়ার কনজিউম করে কিনা, আজ তা আমরা  জানবো।

মোবাইল ফোন ছাড়াও রাউটার বা টিভি কার্ডের মতো ডিভাইসগুলোর সাথে এডাপ্টার থাকে, এগুলোকেও আমরা চার্জার এর সাথে তুলনা করতে পারি। এগুলো সাধারণত  ডিভাইসটিকে একটি স্ট্যান্ডার্ড এমাউন্ট এর ইলেকট্রিসিটি সরবরাহ করে সচল রাখে। এজন্য এগুলো সবসয়ময়ই—একটি মোবাইল চার্জিং করতে যেরকম বিদ্যুত খরচ হয়, সেরকমই বা বেশি বিদ্যুত কনজিউম করে থাকে।

ব্যাপারটিকে আমরা কিছু বৈদ্যুতিক পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই বিশ্লেষণ করতে পারি। বিশ্বব্যাপী  বিদ্যুৎ বিল কিলোওয়াট পার ঘন্টা (kwH) তথা ইউনিটে হিসেব করা হয়। ১ ঘন্টায় ১ হাজার ওয়াট বিদ্যুৎ এর ব্যবহারকে ১kwH বা ১ ইউনিট বলা হয়। তাই আমরা ওয়াটমিটার যন্ত্র ব্যবহার করে সহজেই জানতে পারবো  চার্জারটি কি পরিমান ওয়াট খরচ করছে।

সকেটে ফোন চার্জার লাগিয়েরাখলে কী পরিমান বিল আসবে?

এখানে উদাহরণ হিসেবে আমরা আইফোনের জেনুইন চার্জারকে বেছে  নিবো। একটি পরীক্ষালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায় – আইফোনের চার্জার প্রতিমাসে ১৩০ওয়াট করে পাওয়ার খরচ করে ।

ফলে বছরে ১২ মাস হিসেবে দেখা যায়,  এক বছর আইফোনের জেনুইন চার্জারটি  কেবল সকেটে লাগিয়ে রাখলে ১.৫৬KwH বা ১.৫৬ ইউনিট বিদ্যুত খরচ হবে। বাংলাদেশে ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ বিল ব্যবহৃত বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করে। 

৭৬-২০০ ইউনিট ব্যবহারের জন্য ইউনিট প্রতি বিদ্যুত বিল আসবে ৫ টাকা ১৪ পয়সা, ২০১-৩০০ ইউনিট ব্যবহারের জন্য ইউনিট প্রতি বিদ্যুত বিল আসবে ৫ টাকা ৩৬ পয়সা, ৩০১-৪০০ ইউনিট ব্যবহারের জন্য ইউনিট প্রতি বিদ্যুত বিল আসবে ৫ টাকা ৬০ পয়সা আর ৪০১ ইউনিট এর ওপর ব্যবহারের জন্য ইউনিট প্রতি বিদ্যুত বিল আসবে ৮ টাকা ৭০ পয়সা।

ধরা যাক, বাসায় বা অফিসে মাসে ২০১-৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়। সেক্ষেত্রে আইফোনের চার্জারটি এক বছর বৈদ্যুতিক সকেটে লাগানো থাকলে খরচ হবে ( ১.৫ * ৫.৩৬) টাকা = ৮.০৪ টাকা। যা আমাদের দেশে একবছরের খরেচের তুলনায় নগন্য।

আমরা জানি, বড় মিল-কারখানাতে বিদ্যুত বিল বেশি। একইভাবে সেখানে যদি চার্জারটি সারাবছর সকেটে লাগিয়ে রাখা হয় তাহলেও মাত্র ১২.৯ টাকা খরচ হবে।

চার্জ শেষে কি চার্জারটি সকেটে লাগিয়ে রাখা উচিত হবে?

চার্জ দেয়া শেষেও চার্জার দিকে সকেটে রেখে দেয়া উচিত হবে কি না, তা আপনারাই লেখা শেষে সিধান্ত নিবেন। আমরা উপরের বিশ্লেষণ থেকে জানতে পেরেছি যে, একটি মর্ডান আইফোনের জেনুইন চার্জার সারা বছরও যদি নিরবিচ্ছিন্নভাবে বৈদ্যুতিক সকেটে রেখে দেয়া হয়, তাহলে মাত্র ৮ থেকে ১২ টাকা খরচ হবে।

একইভাবে এন্ড্রয়েড বা অন্যান্য ফোনের ক্ষেত্রেও প্রায় সমপরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হবে। তাই বৈদ্যুতিক বিলের কথা চিন্তা করলে চার্জার সকেটে লাগিয়ে রাখলেও খুব একটা সমস্যা হবে না। আপনি যদি বারবার চার্জার খোলা এবং লাগানোকে ঝামেলা মনে করেন তবে চার্জার সকেটে লাগিয়ে রাখতে পারেন।

একটি চার্জার ফোন চার্জিং এর সময় যেরকম পাওয়ার কনজিউম করে, অন্যসময়ো ঠিক সেই পাওয়ারই কনজিউম করে – ধারনাটি ভুল। চার্জিং এর পরেও চার্জার লাগিয়ে রাখলে আরও কম পাওয়ার কনজিউম করবে।

তবে বিদ্যুৎ লাইনে গণ্ডগোল বা বজ্রপাতের সময় চার্জার সকেটে লাগিয়ে রাখা উচিত হবে না।তেছাড়া স্টেবল বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে লাগিয়ে রাখলে খুব একটা সমস্যা হবে না।

কিছু বড় বড় দিভাইসের চার্জার চার্জ শেষে খুলে রাখা উচিত। কারণ এগুলোতে ‘ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার কনজিউম’ হতে পারে।  বিভিন্ন লেড—এসিড ব্যাটারি চার্জার গুলো স্ট্যান্ড বাই অবস্থাতেও মোবাইল চার্জার এর চেয়ে অনেক বেশি পাওয়ার কনজিউম করে।তাই চার্জিং শেষে খুলে রাখতে হবে।

পরিশেষে আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, চার্জ শেষে আপনার ফোন চার্জারটি খুলে রাখবেন নাকি লাগিয়েই রাখবেন। তবে আমি বলবো, অযথা চার্জার লাগিয়ে রাখলে খুব কম হলেও কিছু খরচ হয়। এটা যদি একটি চার্জার জন্য হিসেব না করে অনেকগুলোর ক্ষেত্রে হিসেব করি তাহলে কিন্তু অনেক টাকা হয়। তাই অযথা অপচয় না করে চার্জ শেষে আপনার চার্জারটি সকেট থেকে খুলে রাখুন।

আরও পড়ুনঃ

পুরোনো স্মার্টফোন কেনাবেচার পাঁচটি ওয়েবসাইট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *