মোবাইল ফোন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অংশ। মোবাইল ফোনের ভালো দিকের পাশাপাশি বেশ কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে। এর একটি হলো মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের আলো।এই আলো চোখের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তবে ব্লু লাইট ফিল্টার অ্যাপ বা ফিচারটি ব্যবহার করে এই ক্ষতির অনেকটাই সম্ভব । এছাড়া পরিবেশের আলোর সাথে ফোনের স্ক্রিনের সামঞ্জস্য থাকলেও তা চোখের জন্য বেশ আরামদায়ক হয়। তাই রাতের বেলায় স্বল্প আলোতে ফোন ব্যহারের জন্য নাইট মোড ফিচার ব্যবহার জরুরী।
যাদের পূর্বে থেকেই চোখের বিভিন্ন সমস্যা আছে তাদের জন্য মোবাইলের আলো অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। মোবাইলের আলোকে সহনীয় করতে ব্লু লাইট ফিল্টার অ্যাপগুলো ব্যবহার করা জরুরী।
বেশকিছু ফোন ও ট্যাবলেটে ডিফল্ট ব্লু শেড রয়েছে। বর্তমান সময়ে স্যামসাং, ওয়ানপ্লাস, শাওমীসহ বেশ কিছু কোম্পানী তাদের ফোনে বিল্টইনভাবে নাইট মোড এবং ব্লু লাইট ফিল্টারের সুবিধাটি যুক্ত করেছে। তবে এখনও এর বাইরে অনেক ফোন রয়েছে যেগুলোতে এই ব্লু লাইট ফিল্টারের ফিচারটি থাকে না।
সৌভাগ্যবসত, এসকল ফোনে নাইট মোড এর জন্য প্লে স্টোরে অনেক অ্যাপ রয়েছে। এসব অ্যাপ ইন্সটল করে খুব সহজেই নাইট মোড কিংবা ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করা যায়। আজকে কথা বলব অনেকগুলো নাইট মোড এবং ব্লু লাইট ফিল্টার অ্যাপের মধ্য থেকে ৫ টি চমৎকার অ্যাপ নিয়ে ।
Midnight
Midnight একটি সম্পূর্ণ অ্যাড মুক্ত অ্যাপ। এতে ব্লু লাইট ফিল্টারের সবধরণের ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু ব্লু লাইট নয়, এর সাহায্য অতিরিক্ত কালো, লাল এবং হলুদ রঙের আধিক্য যেটাকে কালার টেম্পারেচার বলা হয়, সেগুলোও কমিয়ে নেয়া যাবে।
এতে ফিল্টার অন-অফের শিডিউল সেট করে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে । যেহেতু এতে টাইম জোনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিল্টার চেঞ্জ হওয়ার সুবিধা নেই, তাই শিডিউল সেট করার কাজটি ম্যানুয়ালি করতে হবে।
এই অ্যাপটি লাইট সেন্সর ব্যবহার করে কম আলো ও বেশি আলোর পার্থক্য বুঝতে পারে। তাই অন্ধকার বা কম আলোর পরিবেশে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্রিনের আলো একেবারেই কমিয়ে দেবে, অনেকটা ফোনের অটো ব্রাইটনেস অপশনটার মতো।
অ্যাপটি নোটিফিকেশন সেন্টার থেকে চালানোর সুযোগ রয়েছে। এখান থেকে ব্রাইটনেস, এবং ফিল্টার ইচ্ছামতো কমিয়ে কিংবা বাড়িয়ে নেয়া যাবে।
Midnight অ্যাপটির সাইজ ৭ মেগাবাইট, প্লে স্টোর থেকেই অ্যাপটি সম্পূর্ণ ফ্রি।
Night Screen
Midnight অ্যাপটিতে প্রচুর অপশন থাকার কারণে অনেকের কাছে এটি বেশ জটিল মনে হতে পারে। সেক্ষেত্রে Night Screen অ্যাপটি বেশ ভালো একটা সমাধান। এর প্রধান সুবিধা হচ্ছে এটি ব্যবহার করা খুবই সহজ।
অ্যাপটিতে চাপ দিলেই একটি ব্রাইটনেস বার চলে আসবে। সেখান থেকে ব্রাইটনেস কমানো এবং বাড়ানো যাবে। সেটিংসে ক্লিক করে আরও নানা রকম অপশন পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।
Night Screen অ্যাপটির সাইজ মাত্র ২.৭ মেগাবাইট। প্লে স্টোর থেকে ফ্রিতেই ডাউনলোড করতে পারবেন। তবে অ্যাড ফ্রী এবং উইডজেট সুবিধা পেতে চাইলে আপনাকে ১৫০ টাকা খরচ করা লাগবে।
Blue Light Filter – Night Mode
সহজ এবং স্টাইলিশ এই অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরের এডিটর চয়েসের তালিকা ভুক্ত। এর সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে এতে শুধুমাত্র ফিল্টারের ইনটেনসিটি আর ব্রাইটনেস কমানো বাড়ানো ছাড়া অতিরিক্ত কাস্টমাইজেশনের কোন সুযোগ নেই। আর খারাপ দিকটি হলো,অ্যাপটি ব্যবহার করতে গেলে প্রচুর পরিমাণে অ্যাড দেখতে হবে ।
এতে কাস্টমাইজেশনের কোন সুবিধা নেই কিন্তু কালার টেম্পারেচার হিসেব করে কিছু কালার ফিল্টার প্রিসেট করা থাকে। সেখান থেকে ইচ্ছে মতো বেছে নিয়ে কালার পরিবর্তন করা যায়। নোটিফিকেশন সেন্টারে এর যে কন্ট্রোল বারটি থাকবে সেখানে নাইটমোড অন-অফ করার পাশাপাশি সাউন্ড মোড সহ ফ্লাশ লাইট জ্বালানোর অপশন রয়েছে।
Blue Light Filter – Night Mode অ্যাপটি প্লে স্টোর থেকে ফ্রিতে ডাউনলোড করতে পারবেন। তবে বিরক্তিকর অ্যাড দেখা বন্ধ করতে চাইলে আপনাকে ২৫০ টাকা খরচ করতে হবে ।
Twilight
যাদের কাছে অ্যাপের কাস্টমাইজেশন ভীষণ পছন্দ তাদের Twilight অ্যাপটি ভালো লাগবে। এটাকে কোন ভাবেই সাধারণ ব্লু লাইট ফিল্টারের কাতারে ফেলা যাবে না । এতে লাইট ফিল্টার নিয়ে প্রচুর কাস্টমাইজেশনের সুযোগ রয়েছে।
অন্যান্য অ্যপের মত এটিও নোটিফিকেশন সেন্টার থেকে কন্ট্রোল করা যাবে। মাত্র ৩.৪ মেগাবাইটের অ্যাপটি প্লে স্টোরে এডিটর চয়েসের অন্তর্ভূক্তএবং সম্পূর্ণ অ্যাড ফ্রী।
Darker
এই তালিকার সবচেয়ে ছোট এবং সহজে ব্যবহার উপযোগী অ্যাপ হচ্ছে Darker. এই অ্যাপটি অনেকটা বাটনের মতো, এক চাপ দিলে ফিল্টার অন হবে, আবার আরেক চাপ দিলেই অফ হয়ে যাবে। Darker অ্যাপটির সাইজ মাত্র ৮৬ কিলোবাইট। তবে সাইজে ছোট হলেও কাজের বেলায় এতো ছোট না।
এটি স্ক্রিনের ব্রাইটনেস একেবারে কমিয়ে এনে প্রায় অন্ধকার করে ফেলতে সক্ষম । এই অ্যাপে আপনি অনেকগুলো কালারই ইচ্ছা মতো ফিল্টার করে নিতে পারবেন। অ্যাপটি চালু করার পর নোটিফিকেশন সেন্টারে এর কন্ট্রোল প্যানেল আসবে। সেখান থেকে সেটিংস এ গিয়ে আপনি ইচ্ছামত ফিল্টার পরিবর্তন করতে পারবেন।
অ্যাপটি সম্পূর্ণ অ্যাড ফ্রি এবং ফ্রিতে ডাউনলোড করা যাবে। তবে অটো অন-অফ, নোটিফিকেশন বারের বাটন পরিবর্তন, অটো স্টার্ট সহ আরও বেশ কয়েকটি দারুণ সুবিধা পেতে চাইলে আপনাকে ১৫০ টাকা খরচ করে Darker Pro কিনে নিতে হবে।
এই ছিলো আমাদের নাইটমোড এবং ব্লু লাইট ফিল্টার অ্যাপ নিয়ে আলোচনা। আমি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে অ্যাপগুলোর সুবিধা অসুবিধা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, এর মধ্য থেকে আপনার জন্য উপযুক্ত অ্যাপটি বেছে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। স্মার্টফোনের বেশিরভাগ অ্যাপসই টাইম কিলার, সেদিক থেকে এ অ্যাপগুলো ভীষণ উপকারী। এগুলো আপনার চোখকে ক্ষতিকর আলো থেকে সুরক্ষা দেবে।