রাউটার কিভাবে কাজ করে? রাউটার এবং সুইচের মধ্যে পার্থক্য?

বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে আমরা প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছি। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের জন্য রাউটার একটি জনপ্রিয় ডিভাইস।

এখন বাড়ি বা অফিস সব জায়গাতে রাউটারের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। আমাদের প্রশ্ন জাগতে পারে যে এতো চমৎকার ডিভাইস কীভাবে কাজ করে?
আজকের লেখায় আপনাদের জানাবো রাউটার কীভাবে কাজ পার্থক্য। আর বোনাস হিসেবে থাকছে রাউটার ও সুইসের মধ্যে বেসিক পার্থক্য।
কম দামের মধ্যে ভালো রাউটার
রাউটার (What is Router?) কি?
রাউটার হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের সমন্বয়ে তৈরি একটি নেটওয়ার্ক ট্রান্সফার যন্ত্র।
রাউটার একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস বা সিস্টেম, যা ডাটা বা ডাটা প্যাকেট চলাচলের পথ নির্ণয় করে। এখানে ডাটা প্যাকেট হলো অনেকগুলো ডাটার সমষ্টি।
রাউটার ডাটা প্যাকেট গুলোকে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে তার সঠিক গন্তব্যে পৌছে দেয়।
এক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে কম দূরত্বের পাথ (Path) কে ব্যবহার করে থাকে।
রাউটার কেনার আগে যে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হয় ।
রাউটার কিভাবে কাজ করে?
IP Address
রাউটার কীভাবে কাজ করে তা জানার জন্য প্রথমে আমাদের IP Address সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। এককথায় IP হলো Internet Protocol.
ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত প্রত্যেকটি কম্পিউটার বা ইলেট্রোনিক ডিভাইসের ইউনিক একটি অ্যাড্রেস থাকে। এই অ্যাড্রেসকেই বলা হয় IP Address.
এই IP Address ব্যবহার করে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত একটি ডিভাইস ইন্টারনেটে যুক্ত অপর একটি ডিভাইসের সাথে যোগাযোগ করে থাকে।
ইন্টারনেটের সাথে এরকম অসংখ্য ডিভাইস আছে। এর যে কোন নির্দিষ্ট একটি ডিভাইসকে খুঁজে বের করতে IP Address ব্যবহার করা হয়।
IP বা Internet Protocol এর নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। কম্পিউটার ডিভাইসগুলো এই নিয়মগুলো মেনেই ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করে থাকে।
IP Address চারটি ভাগে বিভক্ত। এর প্রথম তিন ভাগ ডিভাইসের অংশ হিসেবে এবং শেষভাগ ইউজার পার্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
যেমন- একটি IP Address – 192.178.0.206
এখানে প্রথম তিন ভাগে আছে 192.178.0 যা ডিভাইসের অংশ হিসেবে কাজ করে।
শেষভাগ হলো 206 যা ইউজার অংশ হিসেবে কাজ করে।
সাধারণত একাধিক ইউজারের একই নেটওয়ার্ক সিস্টেমে কাজ করার অপশন থাকে। তাই এই সিস্টেমের যে কোন ২টি ডিভাইস নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারবে।
কিন্তু যদি একাধিক ইউজারের একই নেটওয়ার্ক সিস্টেমে কাজ করার অপশন না থাকে, তাহলে এই সিস্টেমের ২টি ডিভাইস নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারবে না।
যদি IP Address এর প্রথম তিন অংশ অর্থাৎ ডিভাইসের অংশ একই হলে (২ জন)একাধিক ইউজার ঐ ডিভাইস ইউজ করার অপশন পাবে।
আর যদি ডিভাইসের অংশ আলাদা হয় তাহলে একাধিক(২জন) ইউজার ঐ ডিভাইস ইউজ করার অপশন পাবে না।
IP Address- কে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। নিচে IP Address-এর প্রকারভেদ দেয়া হলো।
IP Address-এর প্রকারভেদঃ
Class A
Class B
Class C
Class A: 192.178.0.206 IP Address-এর 192 এই অংশটুকুকে Class A টাইপের এড্রেস বলে।
Class B: IP Address-এর 192.178 এই অংশটুকু নিয়ে গঠিত এড্রেস কে বলা হয় Class B টাইপের এড্রেস।
Class C: IP Address-এর 192.178.0 এই অংশটুকু নিয়ে গঠিত এড্রেস কে বলা হয় Class C টাইপের এড্রেস।
প্রতিটা ক্লাসের প্রতিটা অংশের ডিজিট 0-255 এর মধ্যে হয়ে থাকে। এর বেশি হয় না।
রাউটার যেভাবে কাজ করে
রাউটার যেভাবে কাজ করে তা বুঝতে হলে IP Address সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। যা আমরা ইতমধ্যে জেনেছি।
রাউটার তার কাজ করার জন্য প্রথমে এর সাথে সংযুক্ত প্রত্যেকটা ডিভাইসের IP Address খুঁজে বের করে।
আরেকটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে, রাউটার সবসময় তার সবচেয়ে কাছের নেটওয়ার্ক সিস্টেমের সাথে কানেক্ট হওয়ার চেষ্টা করে।
রাউটার তার সবচেয়ে কাছে কোন নেটওয়ার্ক আছে তা জানতে ম্যাট্রিক ভ্যালু নামের একটি মাধ্যমকে ব্যবহার করে থাকে।
ম্যাট্রিক ভ্যালু একটি বিশেষ নম্বর। এই বিশেষ নম্বরটি প্রতিটি রাউটারের ইন্টারনাল অংশ হিসেবে থাকে।
যেমন ধরা যাক, দুইটি রাউটারকে একই দূরত্বে আলাদা জায়গায় রেখে কোনো ডিভাইসকে তাদের মধ্যে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে কি হবে?
এক্ষেত্রে ম্যাট্রিক ভ্যালু ভূমিকা রাখবে।যে রাউটারের ম্যাট্রিক ভ্যালু কম হবে, সেই রাউটারের সাথে ডিভাইসটি প্রথমে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবে।
ডিভাইস যখন রাউটারের সাথে সংযুক্ত হয় তখন IP Address ব্যবহার করে। যদি IP Address এ মিল না থাকে তাহলে কখনোই তা নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হবে না।
চলুন আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করি। ধরুন আপনি আপনার মোবাইলের ওয়াইফাই অন করলেন। এখন প্রথমেই আপনার মোবাইলটি তার আশে পাশের সব চেয়ে কম ম্যাট্রিকসের রাউটার খুঁজে বের করবে। এরপর IP Address ব্যবহার করে তার সাথে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবে।
এভাবেই আমাদের দৈনন্দিন ডিভাইসমূহ রাউটারের সাথে যুক্ত হয়ে আমাদের ইন্টারনেট সরবরাহ করছে।
রাউটার এবং সুইচ
একসাথে অনেকগুলো নেটওয়ার্কের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য রাউটার অন্যতম একটি মাধ্যম। রাউটারের সাহায্যে একই সাথে একাধিক ফোন, কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস সংযুক্ত করা যায়। এছাড়া রাউটারকে সুইচ হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
সুইচ ব্যবহার করা হয় তখনই যখন বড় কোনো নেটওয়ার্ক সিস্টেমের প্রয়োজন হয়। যে নেটওয়ার্কে কম্পিউটার, রাউটারের ল্যান পোর্টের সংখ্যা বেশি থাকে সেখানে সুইচ কার্যকরী। সহজ কথায়, একই নেটওয়ার্ক জোনের মধ্যে অনেকগুলো ডিভাইসের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সুইচ ব্যবহার করা হয়।
এটাই রাউটার ও সুইচের মধ্যে বেসিক পার্থক্য।
আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো ব্যবহারের পাশাপাশি তা কীভাবে কাজ করে জানলে তার ব্যবহার অনেক সহজ হয়ে যায়। এছাড়া এটাকে এক ধরণের জ্ঞান চর্চাও বলা চলে। আশা করি আজকের লেখা থেকে আপনারা উপকৃত হবেন। ওয়াইফাই রাউটার সম্পর্কে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *