রাউটার কেনার আগে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখবেন
বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির। এখন ইন্টারনেট ছাড়া আমরা একটা দিনও কল্পনা করতে পারি না। দিন দিন ইন্টারনেটের চাহিদা বেড়েই চলেছে। সাথে সাথে ব্রড ব্যান্ড ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিসেবার চাহিদাও বেড়ে চলেছে। ব্রড ব্যান্ড ভিত্তিক ইন্টারনেটের জন্য রাউটার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি গেজেট। ঘরের জন্য হোক কিংবা অফিসের জন্যই হোক রাউটার কেনার আগে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিবেচনা করতে ভুলে যাই যে ঠিক কোন রাউটারটি আমাদের জন্য উপযুক্ত হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণত দোকানিরাই আমাদের হয়ে রাউটার নির্বাচন করে দেয়। আর আমরাও চোখ-কান বন্ধ করে তাদের বিশ্বাস করে সেটি কিনে বাসায় চলে আসি, যা করা একেবারেই ঠিক নয়।
আবার অনেক ক্ষেত্রে আমাদের ব্র্যান্ড ভিত্তিক দূর্বলতাও লক্ষ্য করা যায়। কোন নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা থাকাটা খারাপ কিছু নয়। এটা হতেই পারে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে একই ব্র্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন মডেল থাকে। রাউটারটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবগুলি মডেলের স্পেসিফিকেশন ও আমারদের প্রয়োজনের ক্ষেত্রে তার উপযোগিতা কতটুকু তা বুঝেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
রাউটার কেনার সময় যা বিবেচনায় রাখবেন
আপনার নতুন নেটওয়ার্ক সেটআপ করা বা পুরাতন নেটওয়ার্ক আপগ্রেড যেটাই করতে চান না কেন, উভয় ক্ষেত্রেই রাউটার কেনা অনিবার্য হবে। আপনার রাউটার কেনার সময় বেশ কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা দরকার । যেমন-
রাউটারের স্ট্যান্ডার্ড কেমন দেখতে হবে?
রাউটার টি সিংগেল ব্যান্ড নাকি ডুয়াল ব্যান্ড দেখা দরকার?
রাউটারটির লাইফস্প্যান কেমন?
সেটির নেটওয়ার্ক রেঞ্জ কতটুকু?
রাউটারের স্ট্যান্ডার্ড
বর্তমানে 802.11ac স্ট্যান্ডার্ডের রাউটারগুলি অফিস কিংবা বাসা, সব জায়গাতেই সব থেকে ভালো পারফর্মেন্স দিয়ে থাকে। এটি 802.11n এর সর্বশেষ আপগ্রেডেড স্ট্যান্ডার্ড যা পূর্বের থেকে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। মনে করুন, আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার আপনাকে ২০ এমবিপিএস স্পীড দেওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। কিন্তু তারপরেও আপনি আপনার কাঙ্খিত স্পীড থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর কারণটা কি হতে পারে মনে এমন প্রশ্ন জেগেছে নিশ্চয়। এর অন্যতম কারণটি হলো আপনার রাউটার 802.11ac স্ট্যান্ডার্ডের নয়। এ কারণে যদি আপনার নতুন রাউটার কেনা বা পুরাতন রাউটার আপগ্রেড করার চিন্তা করেন তাহলে সবসময় 802.11ac স্ট্যান্ডার্ডের রাউটারই কিনুন।
সিংগেল ব্যান্ড নাকি ডুয়াল ব্যান্ড:
ফ্রি ইমেজ
ওয়্যারলেস রাউটার সাধারণত ২টি ভিন্ন ভিন্ন ফ্রিকুয়েন্সিতে কাজ করে থাকে। এর ১টি ফ্রিকুয়েন্সি হচ্ছে 2.4 GHz এবং অপর ফ্রিকুয়েন্সিটি হচ্ছে 5 GHz। সিংগেল ব্যান্ডের রাউটারগুলি 2.4 GHz অথবা 5GHz ফ্রিকুয়েন্সির মধ্যে যে কোন ১টিকে সমর্থন করে থাকে এবং এক সাথে যে কোন ১টি ব্যান্ডকেই ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করে থাকে।
অন্যদিকে ডুয়াল ব্যান্ড ব্র্যান্ডের রাউটারগুলি 2.4 GHz এবং 5 GHz উভয় ব্যান্ডকে সমর্থন করে এবং একই সাথে ২টি ব্যান্ডকেই ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করে থাকে।
ভালো মানের কানেক্টিভিটি পেতে চাইলে সিংগেল ও ডুয়াল ব্যান্ডের মধ্যে যে কোন একটিকে বেছে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার একেক ধরনের ডিভাইস একেক ধরনের ব্যান্ডে কানেক্ট হয়। যেমন আমাদের ব্যবহৃত স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপ 5 GHz ব্যান্ডে কানেক্ট হয়। এছাড়া অন্যান্য ডিভাইসগুলি 5 GHz ব্যান্ডের পাশাপাশি 2.4 GHz ব্যান্ডেও কানেক্ট হয়ে থাকে।
আপনার ব্যান্ড নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনার বসবাসের অবস্থান বিবেচনা করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার বাসস্থান যদি খুবই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হয়ে থাকে তাহলে ডুয়াল ব্যান্ডের রাউটারগুলি আপনার জন্য বেশি উপযোগী। এই ধরণের রাউটারগুলি আপনাকে ভালো মানের স্পীড এবং নিরবিচ্ছিন্ন কানেশন প্রদান করবে।
লাইফস্প্যান:
বাসায় ব্যবহৃত অন্যান্য হার্ডওয়্যারের তুলনায় নেটওয়ার্ক হার্ডওয়্যারগুলিতে অনেক বেশি চাপ পড়ে থাকে। ফলে এগুলি খুব বেশি দিন ব্যবহার করার মতো অবস্থা থাকে না। একবার চিন্তা করে দেখুন, আপনার রাউটারটি একই সাথে ট্যাবলেট, স্ট্রিমিং ডিভাইস, স্মার্টফোন, গেমিং কনসোল, ল্যাপটপ ইত্যাদি ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত আছে। একসাথে এতোগুলো ডিভাইসের সাথে যুক্ত তারউপর আবার ওভারলোড এবং ওভারটাইম ওয়ার্কিং এর কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাউটারের পারফর্মেন্স দুর্বল হতে থাকে।
কখন বুঝবেন যে আপনার রাউটার পরিবর্তন করার সময় হয়ে গেছে? যদি দেখেন যে কোন কারণ ছাড়াই আপনার ডিভাইসগুলি বার বার নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, তখন বুঝতে হবে যে আপনার রাউটার পরিবর্তন করার সময় হয়ে গেছে। এজন্য অবশ্যই আপনার এমন রাউটারগুলো কেনা উচিত, যেগুলোর লাইফস্প্যান অনেক বেশি। এ ধরনের রাউটারগুলোর দাম অন্যান্য রাউটারগুলো থেকে তুলনামূলক একটু বেশি হয়ে থাকে। তবে সস্তা ও নিম্নমানের রাউটার কিনে ২দিন পরপর পরিবর্তন না করে একেবারে ভালো মানের রাউটার কেনাই ভালো।
নেটওয়ার্ক রেঞ্জ:
আপনি রাউটারের পারফর্মেন্স এবং তা থেকে কেমন স্পীড পাবেন তা নির্ভর করে আপনি রাউটারটি কোথায় স্থাপন করেছেন তার উপর। রাউটার স্থাপন করবেন যতটা সম্ভব বাসার মধ্যবর্তী খোলামেলা স্থানে। তাহলে ভালো পারফর্মেন্স পাবেন। একই সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জায়গাটি কোন খোলা জানালার আশেপাশে না হয়। কারণ জানালা বা বাইরের দিকে উন্মুক্ত কোন জায়গায় রাউটার বসালে সিগনাল লিক করে থাকে। যেকরণে আপনি বেশি স্পিড থেকে বঞ্চিত হবেন।
রাউটারের রেঞ্জ এর উপর নির্ভর করে নির্ধারণ জরতে পারবেন কতজন ইউজার রাউটার ব্যবহার করলে ভালো পারফর্মেন্স পাবেন। রাউটারের রেঞ্জ যদি কম হয় তাহলে বড় বাসায় এগুলি ব্যবহার করতে সমস্যা হতে পারে। রাউটারের রেঞ্জ যদি কম হয় তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাউটারে কানেক্ট হতে সমস্যা দেখা দেয়। আবার যদি কানেক্ট হয়ও তাহলে খুবই ধীর গতির ইন্টারনেট পাওয়া যায়। এ কারণে রাউটার কেনার আগে অবশ্যই রেঞ্জের বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরী।
আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নতুন কোন আইএসপি সংযোগ নিলে তারা আপনাকে তাদের কাছ থেকে রাউটার কিনতে প্রস্তাব দিয়ে থাকে। তবে আমি বলবো আইএসপি থেকে রাউটার না কেনাই ভালো। অনেক আবার আইএসপি ফ্রিতেও রাউটার অফার করে থাকে। প্রাথমিকভাবে অফারটি বেশ লোভনীয় মনে হলেও পরে এর সমস্যাগুলো ধরা পড়তে শুরু করে।
রাউটার ক্রয় করার সময় দেখতে হবে যে আপনি ঠিক কি কি প্রয়োজনে রাউটার কিনতে চান এবং সে অনুযায়ী আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি আপনার প্রধান লক্ষ্য হয়ে থাকে ভিডিও কলিং, অনলাইন মুভি বা ভিডিও স্ট্রিমিং কিংবা ডাউনলোড করা, তাহলে অবশ্যই আপনার প্রথম গুরুত্ব হওয়া উচিত ভালো স্পীড।
কাজেই ভালো পারফরমেন্স পাওয়ার জন্য রাউটার কেনার আগে এটির স্ট্যান্ডার্ড, ব্যান্ড, সিকিউরিটি, রেঞ্জ, স্পীড ইত্যাদি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরী। প্রয়োজনে অনলাইনে ভিন্ন ভিন্ন রাউটারের রিভিউ দেখে নিলে আরও ভালো ধারণা নিতে পারবেন। সব রাউটারেই যে সব সুবিধা থাকবে এমন নয়। রাউটার ভেদে সুযোগ সুবিধা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আবার বাজেটের সাথে সামঞ্জস্য রেথে সব ফিচার পাওয় বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই সবদিক খেয়াল রেখে বাজেটের মধ্যে সর্বোচ্চ ফিচারগুলি পাওয়া যায় এমন রাউটার কেনাই উত্তম কাজ হবে। আর কেনার পর অন্যের উপর নির্ভর না করে রাউটারের বেসিক অপারেশন জেনে নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।