পড়া- লেখার ক্ষতি না করে, কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন?

How to do freelancing without harming reading and writing? পড়া- লেখার ক্ষতি না করে, কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন?

পড়া- লেখার ক্ষতি না করে, কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন?
পড়া- লেখার ক্ষতি না করে, কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন?
আসসালামু আলাইকুম।
আমাদের ফ্রিল্যান্সার কমিউনিটির ভেতর প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মানুষ রয়েছেন যারা এখনও একাডেমিক লেখাপড়া করছেন ও পাশা-পাশি ফ্রিল্যান্সিং করছেন বা শিখছেন। আমরা যারা ফুল-টাইম ফ্রিল্যান্সিং করি, তারা জানি ফ্রিল্যান্সিং করার পাশাপাশি লেখাপড়া করা অনেক কঠিন একটা বিষয়। ফুল টাইম ফ্রিল্যান্সিং যারা শুরু করে তারা প্রথমেই মার্কেটপ্লেস মূখী হয়, খুব কম মানুষই এমন পাবেন যারা মার্কেটিং এর মাধ্যমে ক্লায়েন্ট জেনারেট করে। আসলে যারা সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং বা ই-মেইল মার্কেটিং করে ফ্রিল্যান্সিং করেন, ক্লায়েন্ট জেনারেট করেন, তারা বেশি পরিমানে ফ্লাক্সিবল হন ও অধিক সময় পান ক্লায়েন্ট থেকে, কোন কাজ করার জন্য। অন্যদিকে যারা ফাইভার ও আপওয়ার্ক এর মতো মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন, তারা কোন একটা কাজ করার জন্য তুলনামূলক কম সময় পান। এছাড়া তাদের বেশির ভাগ সময় মার্কেটপ্লেসে সময় দিতে হয় নতুন ক্লায়েন্ট এর ম্যাসেজের অপেক্ষার জন্য এবং বিড করার জন্য  ইনভাইট এর রিপ্লাই দেবার জন্য আর এখানেই মূল সমস্যা, যারা শিক্ষার্থী রয়েছেন।

একাডেমিক শিক্ষার্থীদের ফ্রিল্যান্সিং এ মূল সমস্যা,মনোভাব ও অবস্থাঃ

১/ তারা রাত জাগতে পারেন না, সকালে ক্লাস আছে।
২/ তারা অল-টাইম একটিভ থাকতে পারে না, যখন-তখন বায়ারের ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতে পারে না।
৩/ তারা কাজের টাইমলাইন ঠিক রাখতে পারে না, কারন আরো অনেক কাজ থাকে একই সময়, পড়াও থাকে।
৪/ তারা এত প্যারা নিতে চান না, তারা যায়, যখন তারা অবসরে থাকে তখনই কাজ করতে।

তাহলে করনীয় কী? ছাত্রত্ব ও ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে কীভাবে একসাথে সমন্বয় করবো?

আমি যেহেতু একজন লোগো এন্ড ব্রান্ডিং ডিজাইনার, তাই আমি লোগো ডিজাইনার দের উদ্দেশ্যে আমার উপদেশ গুলো দিচ্ছি। একজন একাডেমিক শিক্ষার্থী কীভাবে লেখা-পড়ার ক্ষতি না করে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় সফলতার সাথে কাজ করতে পারেন?
আসুন জেনে নেই-

# করনীয় ১-কনটেস্ট

আমরা জানি একজন লোগো ডিজাইনার হিসাবে ফ্রিল্যান্সার ডট কম ও ৯৯ডিজাইনে আপনার লোগো ডিজাইন কনটেস্টে এটেন্ড করে সহজে আয় করার মতো কোন মাধ্যম নেই। আমরা যারা লোগো ডিজাইনে ক্যারিয়ার গড়েছি, তারা শুরুতেই কনটেস্ট এ এটেন্ড করে নিজের দক্ষতা বাড়িয়েছি এবং আমার ফ্রিল্যান্সার হিসাবে ইনকামের হাতেখড়ি হয়, এই কনটেস্ট এর মাধ্যমে।

একজন ছাত্র হিসাবে কনটেস্টে অংশগ্রহন করার ২ টা সুবিধা,

১। কনটেস্ট করে আপনি আপনার লোগো ডিজাইন স্কিল কে সুপ্রিম লেভেলে নিতে পারবেন।
২। এখানে আপনি যখন ইচ্ছা তখন ডিজাইন জমা দিতে পারবেন/ এন্ট্রি দিতে পারবেন।

এছাড়া কনটেস্ট সাধারনত লম্বা সময়ের জন্য হয়, তাই আপনি আপনার সুবিধা মতো কাজ করতে পারবেন। আমার ব্যাক্তিগত মতামত হলো ৯৯ডিজাইনে কনটেস্ট করলে, আপনার ২ টা উপকার হবে,

১। কাজের ভালো মূল্যায়ন পাবেন।
২। প্রো লেভেল ডিজাইনারের সাথে কাজ করলে, তাদের সাথে প্রতিযোগীতামূলক পরিবেশে ডিজাইন করল, একদিন তাদের মতোই ডিজাইন করতে পারবেন। আমার স্যার একটা কথা বলতো " কনটেস্ট করলেই ভালো লোগো ডিজাইনার হওয়া যায় "। আমি এই পথেই হেটেছিলাম।

# করনীয় ২ -লোগো সেলিং করা, ড্রিবল ও লোগো গ্রাউন্ডে। 

প্রেক্ষাপট ১-
আপনি ছাত্র, আপনার সময় বের করে কনটেস্ট করা ভালো লাগে না, কিন্তু আপনার মাথায় লোগো ডিজাইনের ভালো ভালো আইডিয়া আসে, আপনি লোগো ডিজাইন স্কিলে নিজেকে এক্সপার্ট মনে করেন?
আপনি লোগো ইউনিক ও ক্রিয়েটিভ লোগো কনসেপ্ট তৈরি করেন, এবং সেটা ড্রিবলের " Goods For Sale " এ আপলোড দেন, যার ভালো লাগবে সে আপনাকে নক করে আপনার সাথে দাম ফিক্স করে কিনে নেবে।
এখানে সময়ের কোন প্রতিবন্ধকতা আছে বলে আমি মনে করি না।
প্রেক্ষাপট ২-
আপনি ছাত্র, আপনি যখন সময় পান ৯৯ডিজাইনে কনটেস্ট করেন। অনেক ভালো ভালো লোগো ডিজাইন কনসেপ্ট বানান, ৪ স্টার, ৫ স্টার পড়ে কিন্তু সেই ডিজাইন টা উইন করে না, তবে কনসেপ্ট টা অনেক ক্রিয়েটিভ বানিয়েছেন। ধরুন সেই কনটেস্ট টা করছেন একটি বিউটি ব্রান্ডের জন্য যাদের গোলাপ ফুলের একটি আইকন দরকার, আপনি অনেক ক্রিয়েটিভ উপায়ে ৫ টা ইউনিক ডিজাইন বানিয়েছেন। সেখান থেকে ৩ নম্বর লোগো টা ঐ কনটেস্ট উইন হলো, কিন্তু আর বাকী ৪ টা ক্রিয়েটিভ ও ইউনিক লোগোর কী হবে? সেগুলো কী ফেলনা? না। আপনি ফুলের উপর বেজ করে ইউনিক কনসেপ্ট বানিয়েছেন, যা অন্য কোন ব্রান্ডের হয়তো কাজে আসতে পারে। ডিজাইন ভালো বলেইতো ৪ স্টার, ৫ স্টার পেয়েছেন।
আপনি সেই লোগো গুলো লোগো গ্রাউন্ডের মতো প্ল্যাটফর্মে সেল করেন যেখানে একটি লোগোর সর্বনিম্ন সেলিং প্রাইস ২৫০$ ডলার, এছাড়াও আপনি ঐ লোগো গুলো ড্রিবলের " Goods For Sale " এও আপলোড করতে পারেন। কাজের ভালো মূল্যায়ন পাবেন।

# করনীয় ৩ - লিংকডিন ও ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং

আপনি ছাত্র মানুষ, আপনার ফ্রিল্যান্সিং করার ইচ্ছা আছে, কিন্তু মার্কেটপ্লেসে যেই হারে মানুষের একাউন্ট ব্যান হচ্ছে, আপনি সাহস পাচ্ছেন না মার্কেটপ্লেসে প্রচুর সময় লাগিয়ে একাউন্ট বানিয়ে, গিগ বানিয়ে কাজ করতে।
আপনি চান, অনার্স টা কমপ্লিট করে বা এইচ এস সি টা কমপ্লিট করে, ফ্রিল্যান্সিং এ ভালো ভাবে নামবেন, সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং করে ইমেইল মার্কেটিং করে ক্লায়েন্ট জেনারেট করবেন, হাই টিকিট ক্লায়েন্ট ধরবেন, মার্কেটপ্লেস কে ২০%/ ১০% কমিশন দেবেন না, একাউন্ট হারানোর কষ্ট আপনি করতে রাজি না।

সাস্টেইনিবিলিটিতে আপনি বিশ্বাস করেন, তবে আপনার জন্য রয়েছে লিংকডিন ও ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং। এর মাধ্যমে প্রসপেক্ট ক্লায়েন্ট কে ও তার ইন্ডাস্ট্রিকে মাথায় রেখে আপনি নিশ ও ইন্ডাস্ট্রি রিলেটেড ডিজাইন সার্ভিস প্রদান করবেন, তাদেরকে আপনার নেটওয়ার্কে আনবেন ও তাদের কে আপনার কনটেন্ট ও কোল্ড মেইল দিয়ে এপ্রোচ করে কাজ নেবেন।

এই উপায়ে আপনি ক্লায়েন্ট জেনারেট করতে পারলে আপনার টাইম নিয়ে বেশি ঝামেলা পোহাতে হবে না, সাধারনত তারা আপনাকে বেশি সময় দেবে। এছাড়া আপনি আপনার সুবিধা মতো সময়ে কনটেন্ট রেডি করতে পারবেন। তবে ক্লায়েন্ট কে আউটরিচ করতে হলে কষ্ট করে তাদের টাইম জোন টা খেয়াল রাখতে হবে। রাতের অনেক সময়ই আমরা পড়া-লেখার মধ্যে থাকি না, ফ্রি টাইমটা নিউ প্রসপেক্ট দের হায়, হ্যালো করে, তাদের সাথে রিলেশনশিপ বিল্ড আপ করেন, সেই একদিন আপনার রেগুলার ক্লায়েন্ট হবে।
প্রধানত এই ৩ টা উপায়ে আপনি একাডেমিক শিক্ষার্থী হয়েও ফ্রিল্যান্সিং পেশায় যুক্ত হয়ে সফলতার সাথে কাজ করতে পারবেন। এখানে আমি আরো অনেক উপায়ের কথা উল্লেখ করতে পারতাম, কিন্তু সেগুলোকে আমার বেশি উপোযোগী ও অধিক লাভজনক বলে মনে করিনি। যেগুলোতে আমি বিশ্বাস করি সেগুলোই আপনাদের মাঝে বললাম।
আশা করি এই আর্টিকেল সহ আমার অন্যান্য আর্টিকেল আপনার অনেক কাজে এসেছে। আপনি যদি মনে করেন এই তথ্য গুলো অনেক মূল্যবান ও আমাকে আপনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে চান, প্লিজ প্লিজ এই আর্টিকেল টিকে শেয়ার করুন। এতে আমি ও আমাদের কমিউনিটি উপকারিত হবে। ধন্যবাদ,