ব্লগিং এর মাধ্যমে আয় পার্ট - ২

গত পর্বে আমি ব্লগিং এর মাধ্যমে আয় করার দুইটি উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি।আজ আমরা আরও কিছু উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।যারা আগের সংখ্যা গুলো পড়েন নাই আশা করি পড়ে নিবেন।

ব্লগিং এর মাধ্যমে আয় পার্ট - ২

গত পর্বে আমি ব্লগিং এর মাধ্যমে আয় করার দুইটি উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি।আজ আমরা আরও কিছু উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।যারা আগের সংখ্যা গুলো পড়েন নাই আশা করি পড়ে নিবেন।

৩। নিজের পণ্য বিক্রি করে আয়।

 

আমার মতে সবথেকে স্থায়ী ও নিশ্চিত আয়ের পদ্ধতি ব্লগের সাহায্যে নিজের পণ্য বিক্রি করে আয় করা। কারন এক্ষেত্রে আয়ের ওপর সবথেকে বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয়। যেহেতু পণ্য ডিজাইন, দাম নির্ধারণ, মার্কেটিং পুরোটাই ব্লগার নিজে নিজেই করেন তাই আয় ও তাঁর ওপরই নির্ভর করে হয়ে থাকে।

 

কীভাবে এই পদ্ধতি কাজ করে?

ব্লগার নিজের দক্ষতা অনুযায়ী একটি পণ্য বা পরিষেবা তৈরি করে। তারপর তার ব্লগের মাধ্যমে তিনি সেটির গুনগত মান তুলে ধরে ও বিক্রি করে। ফলে তার বিক্রি বেড়ে যায়।

 

আপনার ব্লগে কীভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার করবেন-

 

* আপনি আপনার বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে নিজে হাতে বা কাউকে দিয়ে কোনও একটি পণ্য বা পরিষেবা তৈরি করে নিন। ইবুক, ভিডিওকোর্সের মত ডিজিটাল পণ্য বা বই, কুকি ইত্যাদি  তৈরি করতে পারেন আপনি।

 

* আপনার পণ্য বা পরিষেবার মূল্য নির্ধারণ করুন নিজেই।এবার পণ্যটি কিভাবে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেবেন তা ঠিক করুন। কুরিয়ার বা পোস্টে ,না কি ক্রেতাকে নিজে এসে সংগ্রহ করতে হবে তা ঠিক করুন।  বিক্রয়মূল্য সংগ্রহের পদ্ধতি, পে-প্যাল, নগদ, চেক, ব্যাঙ্কে সরাসরি টাকা পাঠাতে হবে তা ঠিক করুন।আপনার এবং ক্রেতার দুজনের জন্যই সবথেকে বেশি সুবিধাজনক টাকা সংগ্রহ করার পদ্ধতিটি বেছে নিন।

 

* আপনার ব্লগে একটি ল্যান্ডিং পাতা যোগ করুন,  আপনার তৈরি পণ্যের বিবরণ , পণ্যটির ব্যবহার, উপযোগীতা সম্পর্কে বিশদে লিখুন সেখানে যোগ করুন কেনার বোতাম। যেখানে ক্লিক করে ক্রেতা কিনতে পারবে।

 

*  আপনার পণ্যের প্রচার করুন। এজন্য ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেল মার্কেটিং বা অ্যাডওয়ার্ডের মত মাধ্যমগুলি।

 

*এবার আপনি  আপনার পণ্য বিক্রি করুন ও তা থেকে আয় করুন।

 

কত টাকা আয় করতে পারেন এই পদ্ধতিতে?

কত টাকা আয় হবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে এর কোনও উচ্চসীমা নেই। দাম, উৎপাদনমূল্য সবই যেহেতু আপনিই ঠিক করবেন তাই আয়ও আপনার হাতে। আপনি যত ভাল পণ্য বা সেবা নিয়ে আসবেন, বিক্রিও তত বেশি হবে, আর তা থেকে আয়ও হবে তেমন।

 

এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বেশি আয় করবেন কীভাবে?

 

আপনি আপনার পাঠকের চাহিদা বিশ্লেষণ করুন।এমন পণ্য তৈরি করুন যা আপনার পাঠক কিনতে উৎসাহী হবে। তবেই আপনার বিক্রি বেশি হবে এবং আয় বৃদ্ধি পাবে।

 

৪। ব্লগের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সি করে আয়।

 

আপনি ব্লগিং করছেন।তার মানে অবশ্যই কোনও বিষয়ের ওপর নিশ্চয়ই আপনার বিশেষ কিছু জ্ঞান ও দক্ষতা রয়েছে। যেমন ধরুন আপনি ভাল কেক বানাতে পারেন, বা আঁকতে পারেন,ভ্রমন পছন্দ করেন অথবা ভালো গল্প, কবিতা,ও উপন্যাস লিখতে পারেন।ব্লগে আপনার এই দক্ষতার প্রচার করুন এবং ফ্রিল্যান্স কাজ জোগার করে নিন। আবার ধরুন যদি এরকম কোনও দক্ষতাই আপনার যদি না থাকে, তাহলেও কোন সমস্যা নেই শুধুমাত্র ব্লগিং সংক্রান্ত টিপস্ দিয়েই যথেষ্ট ভালো আয় করতে পারেন আপনি। একসময় দেখবেন আপনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে।অনেকেই টাকা দিয়ে আপনার পরামর্শ নিতে চাইবে, যা এতদিন আপনি বিনামূল্যেই দিয়ে এসেছেন।

 

কীভাবে কাজ করে এই পদ্ধতি?

আপনি আপনার দক্ষতা অনুযায়ী কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করে রোজগার করতে পারেন। আবার চাইলে কাজ করতে পারেন নির্দিষ্ট কোন পছন্দের প্রজেক্টে।

 

ব্লগে কিভাবে এটি ব্যবহার করবেন এই পদ্ধতি?

 

* ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি কী কী কাজ করতে পারেন বা আপনার কি দক্ষতা আছে তা সুন্দর করে লিখুন। কেন একজন আপনাকে কাজ দেবে, অন্যদের থেকে আপনি কোথায় এগিয়ে, আপনার যোগাযোগের নম্বর ও টাকা কিভাবে নিবেন বিস্তারিত তুলে ধরুন।

 

* আপনার পাঠকদের সামনে তুলে ধরুন কী কী কাজ আপনি করতে চান।তারা যদি আপনাকে পছন্দ করে তাহলে তারা তাদের পরিবার ও বন্ধুদের আপনার দক্ষতার কথা জানাতে পারে। তাঁরা যেহেতু ইতিমধ্যেই আপনার ব্লগ পড়েন ও আপনার দক্ষতা সম্পর্কে জানেন তাই তাঁরা সহজেই আগ্রহী হবেন।

 

এছাড়াও অন্যান্য মাধ্যম যেমন সোশ্যাল মিডিয়া, বিজ্ঞাপন ইত্যাদিতেও আপনার দক্ষতার কথা বেশি বেশি প্রচার করুন। যত বেশি সংখ্যক লোক আপনার দক্ষতা সম্পর্কে জানতে পারবে আপনার কাজের সুযোগও ততই বাড়বে।

 

আপনি যখন কোনও প্রজেক্টের কাজ হাতে নিবেন, তা পেশাদারিত্বের সঙ্গে শেষ করুন এবং আপনার সাফল্যের কথাও আপনার ব্লগে প্রকাশ করুন। সেই সাথে আপনার কাজে অন্যান্যরা কেমন খুশি হয়েছে অর্থাৎ আপনার কাজের রিভিউ প্রকাশ করুন আপনার ব্লগে। এভাবে আপনার ব্লগ থেকে আয় করুন।

 

কত টাকা আয় করতে পারবেন এভাবে?

এভাবে আয় করাটা  নির্ভর করছে আপনার জ্ঞান ও দক্ষতার ওপর। আপনার দক্ষতার চাহিদা কতটুকু তার ওপরও নির্ভর করছে আয়ের পরিমাণ। আপনি যদি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারেন এবং জটিল প্রজেক্টে কাজ করার উপযোগী হন তাহলেই বাড়বে আপনার আয়।

 

এভাবে বেশি বেশি আয় করবেন কীভাবে?

নিজের কাজের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করুন আপনি নিজেই। পাঠকদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে জেনে নিন আপনার এই কাজের জন্য তাঁরা কত টাকা দিতে রাজি আছে। বেশিরভাগ সময়ই ব্লগার নিজের কাজের জন্য প্রথম দিকে কম মূল্য নির্ধারণ করেন। তারপর আস্তে আস্তে বাড়াতে থাকে। একবারে বেশি মূল্য নির্ধারণের ফলে নিজের উপযুক্ত আয় করতে পারেন না অনেক নতুনেরা।

 

৫। ব্লগে সরাসরি কোন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে আয়।

 

ব্লগ থেকে টাকা রোজগারের খুবই চালু উপায় হল কোনও কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাদের বিজ্ঞাপন ব্লগে দেওয়া ও তাদের পন্য নিয়ে বিস্তারিত ব্লগে তুলে ধরা। এর ফলে যেকোনও অ্যাডনেটওয়ার্ককে বাদ দিয়েই বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন আপনি।কোন মদ্ধসত্ত প্রতিষ্ঠান থাকে না তাই বাড়বে আয়। এছাড়াও আপনি  ঐ প্রতিষ্ঠান সরাসরি কথা বলে ঠিক করছেন কোন বিজ্ঞাপন দেবেন ও তার জন্য কত টাকা ধার্য্য করবেন, ফলে নিয়ন্ত্রণ থাকছে আপনার হাতে।  কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি খুবই ভাল কাজ করলেও অনেকক্ষেত্রে একেবারেই কার্যকর হয়না।

 

কীভাবে কাজ করে এই পদ্ধতি?

 

আপনি  আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ করবেন। যখনই কেউ সেই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবে আপনি টাকা পাবেন। অথবা মাসিক বা সাপ্তাহিক মূল্যও ধার্য্য করা যেতে পারে আপনি কত টাকা নিবেন। 

 

আপনার ব্লগে এই পদ্ধতি ব্যবহার করবেন কীভাবে-

 

* ব্লগের কোন জায়গায় বিজ্ঞাপনটি দিতে চান ঠিক করে নিন। হেডার, ফুটার, সাইডবার বা লেখার মধ্যে যেকোনও জায়গায় দিতে পারেন বিজ্ঞাপনটি। সাথে লিখতে পারেন পন্যের গুনগত মান সম্পর্কে।

 

আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য কী কী করতে হবে সেই বিবরণ দিয়ে একটি পাতা তৈরি করুন। সেখানে  আপনার পাঠক কারা, আপনি কী বিষয় লেখেন, এবং আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপনের মূল্য কত তা তুলে ধরুন। ব্লগের বিভিন্ন জায়গার জন্য বিভিন্ন মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন। যেমন, হেডারে হয়তো আপনি বেশি মূল্য ঠিক করলেন আর লেখার মধ্যে কম রাখতে পারেন। আপনার যোগযোগ নম্বর বা ই-মেইল আইডিও উল্লেখ করুণ যেন আপনার সাথে সহজেই যোগাযোগ করতে পারে।

 

*মানিটাইজেশন নেটওয়ার্ক-এ নিজের ব্লগকে যুক্ত করুন। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আপনি অনেক বিজ্ঞাপনদাতার কাছে পৌঁছতে পারবেন খুব সহজেই। BuySell Ads এরকমই একটি জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক সাইট। গুগলে সার্চ দিয়ে আরও অনেক ভালো সাইট পেতে পারেন আপনি।

 

ব্লগের যে জায়গায় আপনি বিজ্ঞাপন দিতে চান সেইখানে বক্স করে লিখুন “এখানে বিজ্ঞাপন দিন”।  বিজ্ঞাপনদাতার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এটা। তাছাড়া কেমন বিজ্ঞাপন দিবেন তাও উল্লেখ করতে পারেন।

 

বেশিরভাগ সময়ই বিজ্ঞাপনদাতা মূল্যের বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে স্থির করতে চায়। মূল্যের বিষয় সহমতে এলে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করুন আপনার ব্লগে এবং টাকা উপার্জন করুন।

 

কত আয় হতে পারে এভাবে?

 

 আপনিই যেখানে মূল্য নির্ধারণ করবেন তাই আপনার ওপরই নির্ভর করছে আয়ের পরিমাণ কি হবে। তবে যত বেশি সংখ্যক পাঠক থাকবে আয়ও ততই বেশি হবে।

 

এক্ষেত্রে নতুনদের জন্য একটি টিপস শেয়ার করতে চাই। ব্লগের যে যে জায়গায় বিজ্ঞাপন দেবেন প্রতি জায়গাতেই “এখানে বিজ্ঞাপন দিন” এমন লিখবেন না। কোনও কোনও জায়গায় কিছু নকল বিজ্ঞাপন দিন, এতে বিজ্ঞাপনদাতার আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন দিতে উৎসাহী হবেন।পরে যখন দেখবেন এমনিতেই বিজ্ঞাপন দিতে চাচ্ছে তখন আর না দিলেও চলবে। 

ব্লগিং এর মাধ্যমে আয় পার্ট - ৫ আরও পোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

ব্লগ থেকে আয়ের সবথেকে প্রচলিত উপায় এগুলো। ব্লগ থেকে রোজগার করা যেমন কোনও কঠিন কাজ না তেমনই ছেলেখেলাও না। পণ্য বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক হতে হবে। ব্লগের নিয়মিত পাঠক তৈরি করার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে। যত বেশি সংখ্যক নিয়মিত পাঠক তৈরি করতে পারবেন আপনার আয় ততই বাড়বে। প্রয়োজন ব্লগের প্রচার করতে হবে। অনেক ব্লগারই খুব ভাল প্রবন্ধ লেখেন কিন্তু প্রচার করেন না, ফলাফল স্বরুপ তা তাদের ব্যক্তিগত ডায়েরির মতই রয়ে যায়। প্রচারের মাধ্যমেই একমাত্র সম্ভাব্য পাঠকের খুব কাছে পৌঁছনো । তাই ব্লগের প্রচার করুন।যেকোনও একটি উপায় বেছে নিন আর আয় করুন ব্লগ থেকে।