ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন আমাদের পুরাতন মানসিকতা পরিবর্তন করে ইতিবাচক বাস্তবতাকে অগ্রগতি প্রদান ও চিন্তাভাবনায় আমূল পরিবর্তন আনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার চারটি সুনির্দিষ্ট বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে: মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনগণের সম্পৃক্ততা, সিভিল সার্ভিস এবং দৈনন্দিন জীবনে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। এরই ধারাবাহিকতায় ই-সার্ভিস, ই-গভর্ন্যান্স ও ই-কমার্সের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজতর করেছে।
ই-সার্ভিস
ইলেকট্রনিক পদ্ধতি অবলম্বন করে সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা জনগণকে যে সেবা দিয়ে থাকে তাকে, e-service বলা হয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ই-পুর্জি, ই-পর্চা, ই-টিকেট, টেলিমেডিসিন, ই-এমটিএস ইত্যাদি। একটা সময় আখ চাষীদেরকে পুর্জি তথ্য পাওয়ার জন্য অনেক হয়রানির শিকার হতে হলেও এখন তারা এসএমএসের মাধ্যমে সেই তথ্য পেয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন হাসপাতালে না গিয়েও ফোনকল, অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পেতে পারি। বর্তমানে ডিজিটালাইজেশনের প্রভাবে মোবাইল ফোনে টিকেট ক্রয় করা যাচ্ছে এবং অনলাইনেও টিকেট সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেমের মাধ্যমে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিরাপদে, দ্রুত ও কম খরচে ১ মিনিটের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠানো যাচ্ছে, যার ফলে জীবন যাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। সভ্যতার এ পর্যায়ে এসে হয়রানিমুক্ত সেবা পেতে ই-কমার্সের কোনো বিকল্প নেই।
ই-গভর্ন্যান্স
একটা সময় ছিল, যখন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল সংগ্রহের জন্য বেশ বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো, কখনো বা সপ্তাহখানেক লেগে যেতো! কিন্তু বর্তমানে ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট ও এসএমএসের মাধ্যমে মুহূর্তেই ফলাফল জানা যায়। এছাড়াও দেশের যেকোন প্রান্তে বসে অপর প্রান্তের যেকোন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সহজে আবেদন করা সম্ভব হয়েছে। আজকের দিনে ভর্তিচ্ছুদের ভর্তির আবেদন ফর্ম জমা দেওয়ার জন্য শহর থেকে শহরে ঘুরতে হয় না।
আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সেবা পেতে যেখানে ২-৩ সপ্তাহ লাগতো, সেখানে ঐ সেবা এখন মাত্র ২-৫ দিনে পাওয়া যাচ্ছে। নাগরিক যন্ত্রণার একটি বড় উদাহরণ হলো পরিসেবা সমূহের বিল পরিশোধ করা। কিন্তু বর্তমানের মোবাইল ও অনলাইন সিস্টেমের কল্যাণে এই বিল সহজে পরিশোধ করা যায়। ই-গভর্নেন্সের কল্যাণে কিছু কিছু সেবা সর্বক্ষণ পাওয়া যায়। যেমনঃ এটিএম সার্ভিস, মোবাইল ব্যাংকিং, তথ্যসেবা ইত্যাদি। এর ফলে নাগরিকেরা নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে সেবা গ্রহণ করতে পারছে।
ই-কমার্স
এখন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বাণিজ্য করা যায়, যার প্রচলিত নাম ই-কমার্স। এর ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা বেশ কয়েকটি বহুমুখী সুবিধা পেয়ে থাকে। প্রথমত, বিক্রেতারা অল্প সময়ের মধ্যে বিপণন সম্পন্ন করতে পারেন এবং অধিক সংখ্যক গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছে দেয়া সম্ভবপর ও সহজতর হয়। দ্বিতীয়ত, ক্রেতা কষ্ট ও ভোগান্তি ছাড়াই কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য পেয়ে যায়। এক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং এবং ক্যাশ অন ডেলিভারির মাধ্যমে সহজেই মূল্য পরিশোধ করা যায়। বর্তমান বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রসার বাড়ছে এবং গ্রাহকের সুযোগ-সুবিধা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সবশেষে বলতে হয়, অন্যান্য নিয়ামকের সাথে সাথে ই-সার্ভিস, ই-কমার্স ও ই-গভর্ন্যান্স আমাদের জীবনযাত্রাকে ইতিবাচকভাবে বদলে দিয়েছে, যার ফলে আমাদের কষ্ট ও লোকসানের পরিমাণ কমে গেছে। তাই বলা যায় যে, এই তিনটি ব্যবস্থা আমাদের নাগরিক জীবনকে সহজতর করেছে।
তো, আজকের আর্টিকেলটি এ পর্যন্তই! যদি ভালো লেগে থাকে তবে শেয়ার করতে ভুলবেন না। খুব শীঘ্রই নিয়ে আসবো নতুন কোনো আর্টিকেল। বিদায়!